গ্যাস ওয়েল্ডিং করার সময় উত্তপ্ত ধাতুর সঙ্গে বাতাসের অক্সিজেনের বিক্রিয়া হয়ে অক্সাইড গঠন করে। এ বিক্রিয়াকে অক্সিডেশন বলে। অক্সিডেশনের ফলে জোড়া স্থানে কখনও কখনও ফোসকার মতো, কখনও বা ছিদ্র তৈরি হয়। ফলে জোড়া স্থান দুর্বল হয়। ফ্লাক্স হলো এক প্রকার রাসায়নিক যৌগ, যা ওয়েল্ডিং-এর সময় অক্সিডেশন এবং অন্যান্য অনাকাঙ্ক্ষিত রা সায়নিক বিক্রিয়া প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ফ্লাক্স ওয়েল্ডিং পদ্ধতি সহজতর করতে সাহায্য করে এবং ত্রুটিমুক্ত ওয়েল্ড তৈরি নিশ্চিত করে । ওয়েল্ডিং-এর সময় জোড় স্থানে এসিড প্রয়োগ করতে হয়। কখনো বা উত্তপ্ত ফিলার রড ফ্লাক্সে ডুবিয়ে নেওয়া হয়। ফ্লাক্স সাধারণত সিলিকন, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি ধাতুর অক্সাইড ও সেলুলোজ (Cellulose) এর সংমিশ্রণে গঠিত হয় ।
ফ্লাক্সের কার্যকারিতা নিম্নে প্রদত্ত হলো :
(ক) ওয়েল্ড তল হতে ময়লা দূরীভূত করে ।
(খ) নতুন অক্সাইড তৈরিতে বাধা দেয় ।
(গ) গলিত ফিলার মেটালের সারফেস টেনশন কমিয়ে এর প্রবাহ নিশ্চিত করে ।
(ঘ) গলিত ফিলার মেটালকে সঠিক স্থানে পৌঁছে দেয় ।
(ঙ) অন্য যে কোনো অপদ্রব্য দূরীভূতকরণে সাহায্য করে ।
(চ) ওয়েন্ডিং প্রক্রিয়াকে সহজতর করে।
(ছ) ওয়েল্ডকে অধিক শক্তিশালী ও নমনীয় করে ।
মৌলিকভাবে ফ্লাক্সকে তিনভাবে ভাগ করা যায়। যথা:
(১) হাইলি করোসিভ ফ্লাক্স (Highly corrosive flux)
(২) ইন্টারমিডিয়েট করোসিভ ফ্লাক্স (Intermediate corrosive flux)
(৩) নন-করোসিভ ফ্লাক্স (Non corrosive flux)
করোসিভ ফ্লাক্স না জ্বলিয়ে অথবা লাল বর্ণ ধারণ না করেও উচ্চ তাপ সহ্য করতে পারে, যা অন্য সব ফ্লাক্সের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। গ্যাস ওয়েল্ডিং উচ্চ তাপের প্রয়োজন হয় বলে হাইলি করোসিভ ফ্লাক্স গ্যাস ওয়েল্ডিং এ ব্যবহারের জন্য উপযোগী। এই ফ্লাক্সে অজৈব এসিড বা লবণ থাকে যা অক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে। এই বিক্রিয়া অনেক সময় স্বাভাবিকভাবেও ঘটে থাকে। আবার এই ফ্লাক্সের বিক্রিয়া কোনো কোনো সময় তাপ প্রয়োগের পর শুরু হয়। সাধারণত ফ্লাক্স পাউডার পেস্টের মতো হয় ।
ফ্লাক্সের উপাদান হিসাবে রাসায়নিক দ্রব্যসমূহ হলো- সোডিয়াম, পটাশিয়াম, লিথিয়াম, বোরাক্স, বোরিক অ্যাসিড, বোরেটস ও অ্যালকালি । সাধারণত ফ্লাক্স কঠিন, তরল, পেস্ট ও পাউডার আকারে প্রয়োগ করা হয় ।
ধাতুর নাম | ফ্রান্সের নাম |
---|---|
ব্রাশ ও ব্রোঞ্জ | বোরাক্স শ্রেণিভুক্ত। এতে সোডিয়াম বোরেটের সাথে অন্যান্য উপাদান থাকে । |
তামা | ফ্লাক্স ছাড়াও ওয়েন্ডিং করা যায় তবে অক্সিজেন রোধের জন্য বোরাক্স ব্যবহার করা হয় । |
অ্যালুমিনিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয় | লিথিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম বাই সালফেট, পটাশিয়াম ক্লোরাইড । |
কাস্ট আয়রন | সোডিয়াম, পটাশিয়াম বা অ্যালকালিন, বোরেট, কার্বোনেটস, বাইকার্বোনেটস এবং স্লাগ তৈরির উপাদানসমূহ । |
স্টেইনলেস স্টিল | কম্পাউন্ড অব বোরাক্স, বরিক অ্যাসিড, ফ্লোরস্পার। |
ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যালয়সমূহ | সোডিয়াম ফ্লোরাইড, পটাশিয়াম ফ্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড, বেরিয়াম ক্লোরাইড । |
নিকেল ও অ্যালয়সমূহ | বিশুদ্ধ নিকেলের জন্য ফ্লাক্সের প্রয়োজন নেই । |
মাইন্ড স্টিল | বোরাক্স |
কয়েকটি সাধারণ ফ্লাক্সের বিবরণ দেওয়া হলো :
কাস্ট আয়রন ফ্লাক্স :
এটা গুঁড়া জাতীয়, দেখতে অনেকটা লালচে রঙের। প্রধানত আয়রন অক্সাইড, সোডিয়াম কার্বোনেট ও বাই কার্বোনেট সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা হয় ।
অ্যালুমিনিয়াম ফ্লাক্স :
অ্যালুমিনিয়াম ও এর সংকর ধাতু ওয়েল্ডিং বা ব্রেজিং-এর জন্য নির্দিষ্ট ফ্লাক্স ব্যবহার অপরিহার্য। এই ফ্লাক্স সাধারণত সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম সালফেট, লিথিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড এবং ব্রায়োনাইট সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা হয়।
ব্রেজিং ফ্লাক্সঃ
যে ধরনের ধাতু ব্রেজিং করতে হবে তার ওপর নির্ভর করে ফ্লাক্স নির্বাচন করা হয়। সাধারণত পরিশোধিত এবং বিশুদ্ধ বোরাক্স এবং ধাতুর ক্লোরাইড সংমিশ্রণে এই ফ্লাক্স প্রস্তুত করা হয় ।
তামা বা তামা জাতীয় ধাতুর ফ্লাক্স :
এই জাতীয় যে সকল ফ্লাক্স বাজারে দেখা যায়, তার বেশির ভাগই কিউপ্রাস অক্সাইড হতে তৈরি ।
স্টেইনলেস স্টিলের ফ্লাক্স :
জোড় সুন্দর, মজবুত এবং গলিত ধাতুর উত্তম নিয়ন্ত্রণের জন্য ফ্লাক্স হিসেবে বোরাক্স, বোরিক অ্যাসিড ও ফ্লোরোস্পার ব্যবহার।
ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সংকর ধাতুর ওয়েন্ডিং-এর জন্য ফ্লাক্স : সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, বেরিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি ফ্লাক্স হিসাবে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু উক্ত ধাতুতে ব্যবহৃত ফ্লাক্স খুবই করোসিভ সেজন্য ওয়েল্ডিং-এর কাজ সমাপ্ত হওয়ার পরপরই চিপিং করে ওপরের ধাতুমল সরিয়ে ফেলতে হয় এবং পরে ওয়্যার ব্রাশ দিয়ে ভালো করে জোড় পরিষ্কার করতে হয়।
নিকেল ও নিকেল সংকর ধাতুর ফ্লাক্স :
বিশুদ্ধ নিকেলের জন্য কোন ফ্লাক্সের দরকার হয় না। কিন্তু নিকেল অ্যালয় যেমন ইনকনেল (Inconel ) এবং মোনেল মেটাল-এর জন্য ফ্লাক্স-এর দরকার হয়।
ইনকনেল সংকর ধাতুর জন্য ব্যবহৃত ফ্লাক্স :
এতে ৮০% নিকেল, ১৫% ক্রোমিয়াম এবং ৫% আয়রন থাকে। ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড Ca(OH)2. বোরিক অ্যানহাইড্রাইড (B2O3) ইত্যাদি ফ্লাক্স এতে ব্যবহৃত হয় ।
মোনেল মেটাল-এর জন্য ফ্লাক্স :
৬৬.৫% নিকেল, ৩১.৫% কপার যুক্ত মোনেল মেটালের জন্য ব্যবহৃত ক্যালসিয়াম ফেরাইট (CaFeO2) বেরিয়াম ফেরাইট (BaFe2O4) এবং গাম অ্যারাবিক ইত্যাদি ফ্লাক্স ব্যবহৃত হয় ।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলি
(১) ফ্লাক্স বলতে কী বোঝায় ?
(২) করোসিভ ফ্লাক্সের ব্যবহারের ক্ষেত্রে আলাদা বিশেষত্ব কী?
(৩) ফ্লাক্সের উপাদানের নাম লেখ ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলি :
(১) ফ্লাক্স কত প্রকার ও কী কী?
(২) ফ্লাক্স সাধারণত কী কী ধাতুর সংমিশ্রণে গঠিত হয়।
(৩) ওয়েল্ডিং ফ্লাক্সে কী কী উপাদান থাকে ?
রচনামূলক প্রশ্নাবলি :
(১) বিভিন্ন প্রকার ধাতু ওয়েল্ডিং-এ ব্যবহৃত ফ্লাক্সের নাম লেখ ।
(২) গ্যাস ওয়েল্ডিং-এ ফ্লাক্সের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর ।
আরও দেখুন...